বিজ্ঞানীরা কভিড জনিত কারনে মারাত্বক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বুঝার চেষ্টা শুরু করেছেন
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২০, মালয়েশিয়াকিনি
বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির বড় অংশটি উপলব্ধি করা শুরু করেছেন, তারা ধারনা করছে যে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকের দীর্ঘ মেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে যা আগামি বছরগুলিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ও প্রভাব পরবে বলে বিষেশজ্ঞরা ধারনা করছে।
শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যার পাশাপাশি, রোগীদের দির্ঘমেয়াদি শ্বাস কষ্ট এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গে ও আক্রমন করে যার ফলে রোগীর শরীরে বড় ধরনের ক্ষতি দেখা দিতে পারে।
”আমরা প্রথম ভেবেছিলাম এটি শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট জনিত ভাইরাস। এটি আমাদের পিত্তথলিতে যায়, হার্টে ছড়ায়, এর পর আস্তে আস্তে রোগীর লিভার, ব্রেইন এবং ভিতরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গে ছড়ায়। ডা. এরিক তপল ক্যালিফোর্নিয়া হাসপাতালের একজন হ্রদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন আমরা প্রথম থেকেই এই ভাইরাসের প্রসংশা করতে পারি নাই।
শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা তাদের শরীরে রক্ত জমাট বাধার অসুবিধাগুলিও অনুভব করতে হতে পারে যার দরুন কারও কারও স্ট্রোক ও হতে পারে, এমনকি বিভিন্ন অঙ্গ প্রতংগে আক্রমন করার দরুন অনেক ইনফেকশান হতে পারে। এই ভাইরাসটি ব্রেইনেও আক্রান্ত করে তাই আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমিবমি ভাব, মুখের স্বাদ চলে যাওয়া এবং খিচুনিও হতে পারে ।
আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ থেকে সেরে উঠা খুব সময় সাপেক্ষব্যপার, কখনও কখনও অসম্ভব এবং ব্যয়বহূল ও যার ফলে একজন মানুষের সার্বিক জীবনমানে প্রভাব ফেলে । শিকাগোর নর্থ-ওয়েস্টার্ন মেডিসিনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাদিয়া খান বলেছিলেন, কোভিড -১৯ এর সংক্রমনের ধরন অন্য রোগের চেয়ে আলাদা ।
ডা: সাদিয়া খান আরও বলেন, যাদের হ্রদরোগ জনিত সমস্যা আছে তাদের ইনফ্লয়েন্জার সাথে আরও জটিলতার ঝুকি রয়েছে। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসের বাইরের জটিলতাগুলির ধরন ও পরিমান । ডা: সাদিয়া খান মনে করেন যে, ভবিষ্যতে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি তার স্বাস্থ্যসেবায় অনেক অর্থ ব্যয় করা লাগবে যা তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে ।
কভিড ১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির পূনর্বাসনে অনেক সময় লাগতে পারে
যে সকল আক্রান্ত ব্যক্তি আই সি ইউ বা ভেন্টিলেটরে ছিল তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরায় ফিরে পেতে বা সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
ডা: সাদিয়া খান বলেন, কভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী যারা হাসপাতালে ভর্তী হয়ে চিকিতসা নিচ্ছে তাদের সুস্থ হতে ১ দিনের যায়গায় ৭ দিন লাগতে পারে । তিনি আরও বলেন, যে যত বয়স্ক তার তত বেশি সময় লাগবে সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে এমনকি সে কখনও তার পূর্বের সুস্থ শরীর ফিরে পাবেনা।
মারাত্বকভাবে আক্রান্ত রোগীদের দিকে বেশী দৃষ্টি দিলেও চিকিতসকরা রোগীদের প্রয়োজনের দিকে নজর দিচ্ছেন যেমন যেসকল ব্যক্তিরা প্রথমে আক্রান্ত হয়েছিল এবং হাসপাতলে ভর্তী হওয়ার প্রয়োজন হয়নি কিন্তু তারা এখনও কয়েকমাস ধরে ভূগছেন।
কভিড ১৯ সংক্রমনের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থাগুলি বুঝার জন্য গবেষনা চলছে, বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক টেলিফোন ব্রিফিংয়ে ইউএস সেন্টারস অফ ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনসে সংক্রামক রোগের উপ-পরিচালক জে বাটলার জানিয়েছেন।
"আমরা অবিরত শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি হওয়া লোকের ঘটনাগুলি শুনতে পাই," কিন্তু এই সমস্যা তাদের আরও কতদিন সইতে হবে তা বলা কঠিন।"
মঙ্গলবার ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ হেলেন স্যালিসবারি লিখেছিলেনযে, করোনাভাইরাস লক্ষণ সাধারণত দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হওয়ার পরে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে আনুমানিক ১ জন দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণগুলি বহন করে ।
তিনি আরও বলেন যে তার অনেক রোগীর বুকের এক্স-রে স্বাভাবিক রয়েছে এবং ভিতরে কোন চিহ্ন নেই, কিন্তু তারা এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে নাই।
“আপনি যদি আগে সপ্তাহে তিনবার ৫ কিলোমিটার দৌড়াতেন এবং এখন সিঁড়িতে উ্ঠার পরে শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন, অথবা আপনার সবসময় কাশি হয়ে থাকে এবং কাজে ফিরে আসতে খুব ক্লান্ত বোধ করেন তবে বুঝতে হবে যে আপনার স্বাস্থ্য আগের অবস্থায় এখনও ফিরে আসতে পারে নাই”।
নর্থ-ওয়েস্টার্ন মেডিসিনের নিউরো-সংক্রামক রোগের প্রধান ডাঃ ইগর কোরালনিক গবেষনা করে দেখতে পেয়েছেন যে কোভিড -19-এ আক্রান্ত হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক রোগীর ব্রেইনেরসমস্যা যেমন মাথা ঘোরা, স্মরনশক্তি কমে যাওয়া, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, গন্ধ না পাওয়া এবং রুচি কমে যাওয়া, স্ট্রোক, দুর্বলতা এবং মাংশপেশী ব্যথা হতে দেখা যায়।
নিউরোলজির অ্যানালস-এ প্রকাশিত কোরালনিক ব্রেইনের এই সমস্যাগুলি অস্থায়ী বা স্থায়ী কিনা তা বুঝার জন্য কোভিড -১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি বহির্মুখী ক্লিনিক চালু করেছেন।
খান মনে করেন, এই রোগটি এইচআইভি বা এইডস এর মতই যার কারনে প্রথমদিকে বেশিরভাগ মানুষ মারা গেছে।
খান আরও বলেন,”সম্প্রতি আমরা এইচআইভি রোগীদের হ্রদরোগ সংক্রান্ত জটিলতাগুলির দিকে বেশী নজর দিচ্ছি”।